আখতারউজ্জামান : ছাত্রনেতা থেকে খ্যাতিমান রাজনীতিবিদ

আখতারউজ্জামান

প্রতিবেদক: আখতারউজ্জামান বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ ও একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৮০ দশকের সামরিক এরশাদ সরকার বিরোধী আন্দোলনের সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক হিসেবে খ্যাতিমান। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)’র সহ-সভাপতি (ভি.পি) ছিলেন। পরবর্তীকালে ১৯৯৬ সালে সপ্তম জাতীয় সংসদে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

 

শিক্ষা ও কর্ম জীবন:

১৯৫৩ সালের ২৩ জানুয়ারি গাজীপুর জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ সোম গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন আখতারউজ্জামান। তাঁর বাবার নাম মোঃ আতাউর রহমান এবং মায়ের নাম লিলি বিবি। আখতারউজ্জামান চট্টগ্রাম সরকারি মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং জগন্নাথ কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন।

 

১৯৮২ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। এছাড়াও তিনি ১৯৮৯-১৯৯০ সাল পর্যন্ত লন্ডন ইউনিভার্সিটির অধীনে School of African and Oriental Studies (SOAS), স্কুল অফ আফ্রিকান অ্যান্ড ওরিয়েন্টাল স্ট্যাডিজে (এসওএএস) দক্ষিণ এশীয় আধুনিক রাজনীতি’ বিষয়ে এম.এস. এস অধ্যয়ন করেন।

 

১৯৭১ সালে তিনি ভারতের উত্তর প্রদেশের দেরাদুনে বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স (বিএলএফ) বা মুজিব বাহিনীর প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং রণাঙ্গনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্নেহধন্য দ্বিতীয় সন্তান শেখ জামাল ও যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মণি’র ছোট ভাই শেখ মারুফ তার অধীনে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নেন।

 

রাজনৈতিক জীবন:

আখতারউজ্জামানের রাজনৈতিক জীবনের শুরু হয় স্কুল ছাত্র অবস্থাতেই। তিনি ১৯৬৮-৬৯ সালে চট্টগ্রাম সরকারি মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয়ের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭২-৭৩ সালে জগন্নাথ কলেজ ছাত্র সংসদের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৭৯ এবং ১৯৮১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে পরপর দুইবার সাধারণ সম্পাদক (জি.এস) নির্বাচিত হন। ১৯৮৩ সালে তিনি ডাকসু’র ভি.পি. নির্বাচিত হন। ঢাকা বিশ্বব্যিালয়ের প্রায় একশত বছরের ইতিহাসে আখতারউজ্জামানই একমাত্র ছাত্রনেতা যিনি ছাত্র সংসদ নির্বাচনে দুইবার জি.এস. এবং একবার ভি.পি, নির্বাচিত হয়েছেন।

 

আখতারউজ্জামান ১৯৭৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য নির্বাচিত হয়ে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত এ পদে দায়িত্ব পালন করেন। সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক নির্বাচিত হয়ে তিনি এরশাদ বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুরো ছাত্র সমাজকে নেতৃত্ব দেন। তাঁকে মন্ত্রী হওযার প্রস্তাব দেন সামরিক শাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার কারণে দীর্ঘদিন কারাগারে বন্দি ছিলেন।

 

১৯৯৩ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ২৬ বছর তিনি বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদকসহ বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত সপ্তম জাতীয় সংসদে গাজীপুর-৩ আসনের নির্বাচিত সংসদ সদস্য ছিলেন। একই সময়ে তিনি গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ২০১১ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ১১ বছর তিনি একাধিকবার গাজীপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা পরিষদ প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করেন।

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)র ভি.পি ও জি.এস পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন, সেই সুবাদে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে একাধিকবার দায়িত্ব পালন করেন। একই সালে ডাকসুর ভি.পি ও জি.এস হিসাবে আন্তর্জাতিক ছাত্র সংগঠনের নিমন্ত্রণে ফ্রান্স, লন্ডন, জার্মানী, অস্ট্রেলিয়া, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড, নেপাল, ভারতসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আন্তর্জাতিক সেমিনারে অংশগ্রহণ করেন।

 

সংসদ সদস্য হিসাবে আন্তর্জাতিক পার্লামেন্টারি সম্মেলনে দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, সুইজারল্যান্ড, সুইডেন, ফিলিপাইনসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। একইভাবে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসাবে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ) ও ভারতসহ বিভিন্ন দেশে আন্তর্জাতিক সেমিনারে অংশগ্রহণ করেন।

 

১৯৯৬ সালে সপ্তম জাতীয় সংসদে এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর পুরো কালীগঞ্জ উপজেলাকে আধুনিক যাতায়াত ও যোগাযোগ নেটওয়ার্কের অধীনে এনে ১৭৫ কিলোমিটার পাকা সড়ক নির্মাণ করেন এবং শিক্ষা ও সামজিক উন্নয়ন এবং যুব সমাজের কর্মসংস্থানের জন্য নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। টঙ্গী থেকে ঘোড়াশাল পর্যন্ত সড়ক, সড়ক ও জনপথ বিভাগের অধীনে গাজীপুর-আজমতপুর-ইটাখোলা উপ-আঞ্চলিক মহাসড়ক নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন এবং কালীগঞ্জ উপজেলার রাস্তাঘাট ও অবকাঠামো উন্নয়নে সপ্তম জাতীয় সংসদ অধিবেশনে সোচ্চার ও জোরালো ভূমিকা পালন করেন। ২০০৮ সালে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে প্রলংকারী ঘূর্ণিঝড় “সিডর ও আইলার, তান্ডবের পর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ত্রাণ কমিটির নেতৃত্ব দেন।

 

আখতারউজ্জামান ২০২০-২০২১ সালে “করোনা, মহামারী চলাকালীন জেলা পরিষদের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী, জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো জনগণের মধ্যে স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ, হাত ধোয়ার উপকরণ-সাবান, হ্যান্ড স্যানিটাইজারসহ বিভিন্ন উপকরণ বিতরণ করা হয় এবং জেলা পরিষদের মাধ্যমে ত্রাণ কার্যক্রমের অংশ হিসাবে দুঃস্থ ও বেকারদের মধ্যে খাদ্যসহ ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে, কোভিডের সংকটকালীন সময়ে অক্সিজেন সিলিন্ডার বিতরণ, কোভিড আক্রান্তদের স্বাস্থ্যসেবার জন্য রোগীর ভলান্টিয়ার সেবা এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচির অংশ হিসেবে গাজীপুর রেডক্রিসেন্টের ভলান্টিয়ার ছেলে-মেয়েগণ সুরক্ষা ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

আখতারউজ্জামান ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারী জাতীয় নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে ট্রাক প্রতীকে ১৪৯৩৭ ভোট বেশী পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি মেহের আফরোজ চুমকি নৌকা প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৬৭৭৮৩ ভোট। আখতারউজ্জামানের প্রাপ্ত ভোট ৮২৭২০ ।

সূত্র: আখতারউজ্জামান এর ফেসবুক পেজ |