নিউজ ডেস্ক : ঝিনাইদহের মাঠে মাঠে এখন আবাদ হচ্ছে আফ্রিকার ফল ড্রাগন। ঝিনাইদহ এখন ড্রাগন ফলের জেলায় রূপ নিয়েছে। জেলায় চলতি মৌসুমে সাড়ে তিন’শ কোটি টাকার ড্রাগন ফল বিক্রি হবে বলে আশা ব্যক্তি করেছে চাষিরা। কৃষকদের ভাষ্য এ জেলায় দ্রুত বাড়ছে ড্রাগন ফলের চাষ। লাভ বেশি হওয়ায় কৃষকরা ড্রাগন চাষে ঝুকছে। চলতি বছরে ঝিনাইদহে ৬ হাজার ২২৫ বিঘা জমিতে (৮৩০ হেক্টর) ড্রাগন চাষ হয়েছে।
ঝিনাইদহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, এই জেলায় আনুমানিক সাড়ে ৩০০ কোটি টাকার ড্রাগন ফল উৎপাদন হবে। তথ্য নিয়ে জানা যায়, ২০০২ সালের দিকে প্রথম জেলায় শখের বশে অনেকে ড্রাগন ফল চাষ করতো। ২০১৬ সালের দিকে জেলার কালীগঞ্জের কৃষক বোরহান উদ্দিন ও শহিদুল ইসলাম বাণিজ্যিকভাবে ড্রাগন ফলের চাষ শুরু করে।
ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রফেসর ড. আব্দুর রহিমের মাধ্যমে ঝিনাইদহের কৃষকরা চারা সংগ্রহ করে। তাদের দেখাদেখি আরো অনেকে বাণিজ্যিকভাবে ড্রাগন ফল চাষ শুরু করে। অনেকেই এ ফলের চাষ করে লাভবান হয়েছে। তাদের একজন কালীগঞ্জ উপজেলা শিবনগর গ্রামের সুরত আলী। তিনি জানান, ২০১৭ সাল থেকে তিনি ড্রাগনের চাষ শুরু করে। ২৫ বিঘা জমির ওপর তার ড্রাগন বাগান। প্রথম বছর ফল কম ধরে। বাগানের বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে ফল উৎপাদন বাড়তে থাকে।
কৃষক বিপ্লব জানান, ডিপ ইরিগেশন সিস্টেমের মাধ্যমে লাগানো তার বাগানের প্রতিটি গাছ সমান ভাবে খাদ্য, পানি ও পুষ্টি পাচ্ছে। পানির কোনো অপচয়ও নেই এই পদ্ধতিতে। এই বাগানে বিঘা প্রতি ১০ টন করে ফলন আশা করছে তিনি।
কালীগঞ্জ উপজেলা বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের শেখ আবুল কাশেমের ছেলে ড্রাগন চাষি রাসেল আহমেদ জানান, একবার এই ফলের বাগান তৈরি করতে পারলে ১৫ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। এতে একজন কৃষকের ভাগ্য বদলাতে সহজ হয়।
ঝিনাইদহ শহরের উপ-শহর পাড়ার ড্রাগন চাষি হাফেজ আকতার হোসেন জানান, বর্তমান পাইকারি বাজারে এ গ্রেড ড্রাগন ফল ২৬০ টাকা কেজি ও বি গ্রেড ফল ১৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ফল ভালো হলে বিঘাপ্রতি ৭ থেকে ৮ লাখ টাকা আয় হয়। ফলের দোকানগুলোতে অন্যান্য ফলের সঙ্গে ড্রাগন ফল বিক্রি হচ্ছে, চাহিদাও ভালো।
এদিকে ঝিনাইদহের কিছু অসাধু কৃষক ড্রাগনে ক্ষতিকারক হরমোন বা টনিক প্রয়োগ করে দ্রুত ফল বর্ধমান প্রক্রিয়া চালাচ্ছে। এতে মানবদেহে ক্ষতিসাধিত হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মহেশপুর উপজেলা গৌরীনাথপুরে ড্রাগন ফলের হাট বসে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা এসে এখান থেকে ফল কিনে নিয়ে যায়। মহেশপুর উপজেলার গৌরীনাথপুর গ্রামের মফিজুর রহমান জানান, এ বছর বৃষ্টি কম ও গরমের কারণে ফলন কম হচ্ছে। এতে লাভ কম হবে। গৌরীনাথপুর গ্রাম জুড়ে শুধুই ড্রাগন ফলের বাগান। এসব বাগানে কাজ করে শত শত মানুষ জীবিকা অর্জন করছে। গৌরীনাথপুরে ড্রাগনের হাট বসেছে ১০ মাস আগে। সেখানে অন্তত ৫০টি আড়তে ড্রাগন ফল কেনাবেচা চলে। এই বাজার থেকে ড্রাগন ফল ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, ফেনী, নোয়াখালী, বগুড়া, রংপুর, দিনাজপুর, নওগাঁ, সৈয়দপুর ও নিলফামারীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যাচ্ছে।
বাজারের আড়তদার জসিম উদ্দিন জানান, গৌরীনাথপুরে তিনি প্রথম ড্রাগন ফল কেনাবেচার আড়ত খোলে। তার দেখাদেখি আরো অনেকেই আড়ত খুলেছে। বর্তমানে প্রতিদিন গৌরীনাথপুর হাটে তিন থেকে চার কোটি টাকার ড্রাগন কেনাবেচা হয়। তিনি প্রতিদিন ৪০ থেকে ৫০ লাখ টাকার ড্রাগন ফল কেনাবেচা করে বলে জানান।
ঝিনাইদহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আজগর আলী জানান, এই জেলায় অন্য ফসলের চেয়ে ড্রাগন ফলের চাষ বাড়ছে। এ পর্যন্ত ৮৩০ হেক্টর জমিতে ড্রাগনের চাষ হয়েছে। দিন দিন ড্রাগন ফলের চাহিদা বেড়েই চলেছে। হাটবাজারে ফলের দোকানগুলোতে প্রচুর ড্রাগন ফল শোভা পাচ্ছে। বিক্রিও ভালো হচ্ছে। তারা ফলের জাত ও মান উন্নয়নের জন্য কারিগরি পরামর্শ দিচ্ছে।
Related Post:
নওগাঁয় শীতের আগাম সবজি চাষে লাভবান হচ্ছে কৃষকরা