খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ও একদিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা

খালেদা জিয়া ইন্তেকাল

আজ মঙ্গলবার ভোর ছয়টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় খালেদা জিয়া ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন) তাঁর বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। সকাল সোয়া ৯টায় এভারকেয়ার হাসপাতালে এক সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

দেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতির শীর্ষ নেত্রী, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি বলেছেন, খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে জাতি এক মহান অভিভাবককে হারিয়েছে।

আজ দুপুর ১২টায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণের শুরুতে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আজ আমাদের পুরো জাতি গভীর শোক ও বেদনায় নিস্তব্ধ। দেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতির শীর্ষ নেত্রী, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া আর আমাদের মাঝে নেই। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।’

 

তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার ইন্তেকালে জাতি গভীরভাবে শোকাহত ও মর্মাহত। এই গভীর শোকের মুহূর্তে খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্য, রাজনৈতিক সহকর্মী এবং অগণিত কর্মী-সমর্থকের প্রতি সমগ্র জাতির পক্ষ থেকে আন্তরিক সমবেদনা জানান প্রধান উপদেষ্টা। একই সঙ্গে তিনি মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন, যেন সবাই এই শোক কাটিয়ে ওঠার শক্তি লাভ করেন।

 

ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বেগম খালেদা জিয়া ছিলেন বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক পরম মহিমান্বিত ব্যক্তিত্ব। গণতন্ত্র, বহুদলীয় রাজনৈতিক সংস্কৃতি এবং জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে তাঁর অসামান্য ভূমিকা ইতিহাসে অম্লান হয়ে থাকবে। স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে তাঁর আপসহীন নেতৃত্ব বারবার জাতিকে গণতন্ত্রহীন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের পথ দেখিয়েছে এবং মুক্তির প্রেরণা জুগিয়েছে।

 

তিনি বলেন, দেশ ও জাতির প্রতি খালেদা জিয়ার সমুজ্জ্বল অবদান জাতি চিরকাল শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে। তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক যাত্রা, গণমুখী নেতৃত্ব এবং প্রিয় মাতৃভূমির স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় অবিচল ভূমিকা অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে। এমন একজন মহান, দূরদর্শী ও নিখাদ দেশপ্রেমিক নেত্রীর শূন্যতা পূরণ হবার নয় বলে উল্লেখ করেন তিনি।

 

আজ মঙ্গলবার ভোর ছয়টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন) তাঁর বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। সকাল সোয়া ৯টায় এভারকেয়ার হাসপাতালে এক সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, এই সংবাদটা নিয়ে সবার সামনে দাঁড়াতে হবে ভাবিনি।  আমরা এবারও ভেবেছিলাম তিনি আগের মতো সুস্থ হয়ে উঠবেন। আমরা ভারাক্রান্ত হৃদয়ে বলছি আজ ভোর ৬ টায়, গণতন্ত্রের মা, আমাদের অভিভাবক, জাতির অভিভাবক আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছেন।

মৃত্যুর সময় খালেদা জিয়ার শয্যাপাশে ছিলেন তাঁর জ্যেষ্ঠ ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এ সময় হাসপাতালে আরও উপস্থিত ছিলেন তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান, মেয়ে জাইমা রহমান এবং প্রয়াত ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি।

খালেদা জিয়ার জীবনকথা:

পূর্ণ নাম: বেগম খালেদা জিয়া
জন্ম: ১৫ আগস্ট ১৯৪৫, দিনাজপুর
স্বামী: শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান
দল: বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)

শৈশব ও শিক্ষা

খালেদা জিয়া দিনাজপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি সাধারণ পারিবারিক পরিবেশে বেড়ে ওঠেন এবং শিক্ষাজীবন সম্পন্ন করেন দিনাজপুরে।

রাজনৈতিক জীবনে প্রবেশ

১৯৮১ সালে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর তিনি ধীরে ধীরে রাজনীতিতে সক্রিয় হন।
১৯৮৪ সালে তিনি বিএনপির চেয়ারপারসন হন।

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব

খালেদা জিয়া বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী। তিনি তিনবার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন:

  • ১৯৯১–১৯৯৬

  • ২০০১–২০০৬

তার শাসনামলে সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা, শিক্ষা বিস্তার, অবকাঠামো উন্নয়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উদ্যোগ নেওয়া হয়। একই সঙ্গে তাঁর সময়কাল রাজনৈতিক সংঘাত ও বিতর্কেরও সাক্ষী।

মামলা, কারাবাস ও স্বাস্থ্য

২০০৭ সালের পর তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়।
২০১৮ সালে তিনি কারাবরণ করেন এবং পরবর্তীতে গুরুতর অসুস্থতার কারণে শর্তসাপেক্ষ মুক্তি পান। বর্তমানে তিনি বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগছেন এবং চিকিৎসাধীন।

ব্যক্তিগত জীবন

তিনি দুই পুত্রের জননী—

  • তারেক রহমান

  • আরাফাত রহমান কোকো (ইন্তেকাল করেছেন)

ঐতিহাসিক গুরুত্ব

খালেদা জিয়া বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক শক্তিশালী ও প্রভাবশালী চরিত্র। শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব বাংলাদেশের রাজনীতিকে বহু দশক প্রভাবিত করেছে।