আশিকুর রহমান, নরসিংদী : সরকারের নানামুখী পদক্ষেপের পরও নিয়ন্ত্রণেহারা নিত্যপণ্যের দাম। একে একে বেড়েই চলেছে চাল-ডাল-চিনি-পেঁয়াজ-আলু সহ নিত্যপণ্যের দাম। এতে করে আয়ের তুলনায় ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় বাজারে আসা ক্রেতা সাধারণের মাথায় হাত। সরকার বড় না অসাধু সিন্ডিকেট বড় এমন অভিযোগ অনেকের।
১০ নভেম্বর, নরসিংদীর বড়বাজার, ভেলানগর, ব্রাহ্মন্দী সমবায় বাজারসহ ছোট বড় বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে চাল-ডাল-চিনি-আলু-পেঁয়াজ ও মাংসের দাম। প্রতি কেজিতে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৪০-১৫০ টাকা। তবে ভারতীয় পেঁয়াজ ১২০ টাকা ও মিশরীয় বড় (লাল) পেয়াজ প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। গত সপ্তাহে আলু প্রতিকেজি বিক্রি হয়েছিল ৬০ টাকায়। একসপ্তাহের ব্যবধানে ১০ টাকা বেড়ে তা এখন বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়।
দেশি রসুন ২৬০ টাকা, চায়না রসুন ২৪০ টাকা, চায়না আদা ২৮০ টাকা, নতুন ভারতীয় আদা ১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। শীতকালীন সবজি বাজারে কিছুটা দেখা গেলেও দাম সহনীয় পর্যায়ে না থাকায় ক্রেতা সাধারণের নাগালের বাইরে। নতুন আলু প্রতি কেজি ২০০ টাকা, ভারতীয় টমেটো কেজি ১৪০-১৫০ টাকা, চায়না গাজর ১৫০ টাকা, শিম ১২০ টাকা, লম্বা বেগুন ৬০ টাকা, গোল বেগুন ১০০ টাকা, শসা ৬০ টাকা, উচ্ছে ১০০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, কাঁকরোল ৭০ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা, মুলা ৬০ টাকা, ঢেঁড়স ৮০ টাকা, পটল ৭০ টাকা, ধুন্দল ৬০ টাকা, ঝিঙা ৮০ টাকা, বরবটি ১২০ টাকা, কচুর লতি ৮০ টাকা, কচুরমুখী ৮০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৬০ টাকা, কাঁচা মরিচ ১২০ টাকা, ধনেপাতা ২০০-২৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর মানভেদে প্রতিটি লাউ ৭০-১০০ টাকা, চাল কুমড়া ৮০ টাকা, ফুলকপি (ছোট) ৬০ টাকা, বাঁধাকপি (ছোট) ৫০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি হালি কাঁচা কলা ৪০ টাকা, এক হালি লেবু বিক্রি হচ্ছে ৪০-৬০ টাকা করে।অপরদিকে বাজারে চালের দাম আরেক দফা বেড়েছে। গত সপ্তাহে প্রতি কেজি মিনিকেট সর্বনিম্ন ৬৫-৬৭ টাকায় বিক্রি হলেও এখন তা বেড়ে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাইজাম ও বিআর-২৮ জাতের চাল প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকা, যা গত সপ্তাহে ৬২ টাকায় বিক্রি হয়েছে বলে জানা দোকানিরা। পাশাপাশি মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা জাতের চাল প্রতি কেজি সর্বনিম্ন বিক্রি হচ্ছে ৫৩ টাকায়। যা গত সপ্তাহে ছিল ৫১ টাকা। ছোট মসুর ডাল ১৩৫ টাকা, মোটা মসুর ডাল ১১৫ টাকা, বড় মুগ ডাল ১৪০-১৫০ টাকা, খেসারি ডাল ১১০ টাকা, বুটের ডাল ১৪৫ টাকা, মাষকলাই ডাল ১৯০ টাকা, ডাবলি ৭৫ টাকা, ছোলা ১৩০ টাকা, প্যাকেট পোলাও চাল ১৫০ টাকা, খোলা পোলাও চাল মানভেদে ১১০-১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর বোতলজাত সয়াবিন তেল (৫ লিটার) ৮১০-৮১৫ টাকা, খোলা সয়াবিন তেল ১৬৫ টাকা কেজি। প্যাকেটজাত চিনি ১৩৫ টাকা, খোলা চিনি ১৪০, টাকা, দুই কেজি প্যাকেট ময়দা ১৫০ টাকা, আটা দুই কেজির প্যাকেট ১১৫ টাকা, খোলা সরিষার তেল প্রতি কেজি ২২০-২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজার ভেদে কক মুরগির দাম কমেছে কেজিতে ৫-১০ টাকা, লেয়ার মুরগির দাম কমেছে ৫-১০ টাকা এবং দেশি মুরগির দাম কেজিতে ৫০ টাকা বেড়ে ৫৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক কুড়ি ফার্মের (লাল) ডিম ২৫০ টাকা আর দেশি হাঁসের ডিম কুঁড়ি প্রতি ৩৮০-৩৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গরুর মাংস প্রতিকেজি ৭৫০ টাকা ও খাসীর মাংস ১২০০-১৩০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। মাছের ভরা মৌসুমে বাজারে মাছের সরবরাহ কিছুটা বেড়েছে। তবে ইলিশ মাছের সরবরাহ একেবারে নেই বললেই চলে। বাজারে আকার ও ওজন অনুযায়ী ইলিশ মাছ কেজি ১২০০-১৮০০ টাকা, রুই মাছ ৪০০-৬০০ টাকা, কাতল মাছ ৪০০-৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজার করতে আসা ষাটোর্ধ বয়সের ব্যক্তিকে নিত্যপণ্যের দাম জিজ্ঞেস করলে তিনি প্রতিনিধিকে উল্টো প্রশ্ন করেন, সরকার বড় না সিন্ডিকেট বড়? তাহলে আমরা সাধারণ ক্রেতারা সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি থাকবো কেন? বর্তমান বাজার ব্যবস্হায় আমরা দিশেহারা। জিনিসপত্রের দাম শুনে মাথায় হাত। এসব সিন্ডিকেটর কবল থেকে আমাদেরকে মুক্ত করতে হবে। সেই সাথে শক্ত হাতে বাজার মনিটরিং করতে পারলেই নিত্যপণ্যের দাম ক্রয়সীমার মধ্যে আনতে বা রাখতে পারবে।
আলুর দাম বেড়ে যাওয়া ও ভরা মৌসুমেও সবজির দাম না কমা নিয়ে স্থানীয় বিক্রেতা বলেন, এই সময়ে বাজারে নতুন আলু ও শীতকালীন সবজি থাকার কথা ছিল, কিন্তু এখনও সেভাবে পাওয়া যাচ্ছে না। উত্তর-পূবাঞ্চলে হঠ্যা বন্যা। এছাড়াও কিছুদিন আগে অসময়ে ঝড়-বৃষ্টিতে অনেক কৃষকের সবজির ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে সবজি বাজারে সরবরাহ কমে যাওয়ার কারণেই দাম বেড়েছে।